বাংলা নববর্ষ! মানেই নতুন কাপড়, মিষ্টির হাঁড়ি, পান্তা-ইলিশ, আর রঙিন শোভাযাত্রা। কিন্তু আমরা যেটুকু দেখি, সেটাই কি পুরোটা? এই উৎসবের পেছনে রয়েছে দারুণ এক ইতিহাস আর কিছু চমকপ্রদ তথ্য, যা জানলে আপনার নববর্ষের আনন্দ আরও গভীর হবে!
কোথা থেকে এলো বাংলা নববর্ষ?
বাংলা সনের জন্ম হয় প্রায় ৪০০ বছর আগে, মুঘল সম্রাট আকবর এর হাত ধরে। তখন রাজস্ব আদায়ের হিসাব রাখতে গিয়ে দেখা যায়, চান্দ্র হিজরি ক্যালেন্ডার কৃষিকাজের সঙ্গে মিলছে না। ফসল তো চাঁদ দেখে হয় না, তাইনা?
তাই আকবরের আদেশে এক নতুন সৌরভিত্তিক বর্ষপঞ্জি চালু করা হয়—নাম হয় "ফসলি সন", যেটা পরেই পরিচিত হয় বাংলা সন হিসেবে। তখন থেকেই শুরু হয় নববর্ষ পালনের ঐতিহ্য।
তখন নববর্ষ মানেই খাজনা আর পুণ্য
হ্যাঁ, তখনকার দিনে নববর্ষ মানেই জমিদারদের খাজনা তোলা আর প্রজাদের আপ্যায়নের সময়। ‘পুণ্য’ নামের একটা অনুষ্ঠান হতো, যেখানে প্রজারা খাজনা দিত, আর জমিদার দিতেন মিষ্টিমুখ। এরপর গান, বাদ্য আর খানাপিনা—সেই সময় থেকেই শুরু বাঙালির উৎসবপ্রিয়তার গল্প।
আজকের পয়লা বৈশাখ কেমন হলো?
আজকের “পয়লা বৈশাখ” অনেকটাই শহুরে সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা, গ্রামে বৈশাখী মেলা, দোকানে হালখাতা, রেস্তোরাঁয় বিশেষ মেনু—সব মিলিয়ে সবার অংশগ্রহণে গড়া এক সার্বজনীন উৎসব।
কিছু অজানা কিন্তু মজার তথ্য!
১. রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নববর্ষের সাংস্কৃতিক কারিগর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলেছিলেন নিজের গান আর নাটকের মাধ্যমে। "এসো হে বৈশাখ" শুধু একটা গান না, এটা যেন এক আহ্বান।
২. মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্বখ্যাত
চারুকলার সেই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত। এটি এখন শুধু ঢাকার না, পুরো বাঙালির অহংকার।
৩. একেক বাংলায় একেক ক্যালেন্ডার!
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা পঞ্জিকা একটু আলাদা। বাংলাদেশ সরকার পঞ্জিকাটি আধুনিকভাবে সংস্কার করেছে, ফলে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিলই হয় নববর্ষ।
৪. আগে দিন শুরু হতো রাত থেকে!
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন। নববর্ষ একসময় শুরু হতো সূর্যাস্তের পর! পরে দিনের শুরু ধরা হয় সকাল থেকে।
৫. ‘পয়লা বৈশাখ’ শব্দটি নতুনই বলা যায়
পুরানো নথিপত্র ঘাটলে দেখা যায়, ‘পয়লা বৈশাখ’ শব্দটি জনপ্রিয় হয় মূলত বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
শেষ কথায় বলি—
বাংলা নববর্ষ কেবলই একটি উৎসব নয়। এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আত্মপরিচয়ের অংশ। এই দিনে আমরা শুধু নতুন ক্যালেন্ডার নয়, বরং নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন আর নতুন শুরুকে বরণ করি।
আপনার নববর্ষ হোক প্রাণভরে হাসির, খাঁটি বাঙালিয়ানায় ভরা। শুভ নববর্ষ!